
শা ই খ আ হ ম দ উ ল্লা হ
- এক. একটি বছর অতিবাহিত হওয়া মানে মুল্যবান জীবনের একটি অংশ খসে পড়া। কবরমুখী যাত্রার এই টার্নিং পয়েন্টে এসে ফুর্তি করা কোন বিবেকবানের কাজ হতে পারে না। জীবনের প্রতিটি স্টপেজে দাঁড়িয়ে একজন বুদ্ধিমান লোক নিজের আয় ব্যয়ের হিসাব মেলায়।
মুসনাদে আহমদের বর্ণনামতে হযরত উমর রা: বলেন-তোমরা হিসাব গ্রহণ করার পূর্বেই নিজের হিসাব নিজেই নিয়ে রাখ। সুরা হাশরে আল্লাহ তা’আলা বলেন- তোমরা তাদের মতো হয়োনা, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, তাই আল্লাহও তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন।
তিরমিযীর বর্ণিত হাদীসে এসেছে-সেই (প্রকৃত) বুদ্ধিমান, যে নিজেই নিজের হিসাব গ্রহণ করে এবং পরকালের জন্য কাজ করে। সুরা মু’মিনূনে আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগত বান্দাদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, যারা তাঁদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে….তারাই ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করে এবং তাতে বিজয়ী হয়।
দুই. নতুন বছর এলেই কি ফুর্তি করতে হবে? সব নতুনত্বে উৎসব আর উম্মাদনা উম্মাদেরই কাজ হতে পারে। একজন মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত আসামীর জন্য নতুন বছরের আগমন কখনোই ফুর্তির কারণ হতে পারে না। বরং প্রতিটি নতুন দিনই তার নি:শ্বাসকে দীর্ঘায়িত করার কথা। আমরা সকলেই তো মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মতোই। যে কোন সময় সমন আসতে পারে!
তিন. নববর্ষের ফুর্তির নামে পশুদেরও হার মানানো নির্লজ্জতায় ডুবে যায় সমাজ। কথায় আছে, লজ্জা উঠে গেলে কোন কিছু করতেই বাঁধ ও বাধা থাকে না। অর্থনৈকি চরম দুরাবস্থা ও দারিদ্রের কশাঘাতে আহত সাধারণ জনগনকে যারা রক্ষা করার মুখরোচক শ্লোগান তুলে থাকেন, সেসব একশ্রেণীর ভদ্রতার মুখোশধারী রাজনীতিক, সুশীল ও পদস্থ কর্মকর্তা এবং গরীবের রক্তচোষা বণিকেরা মেতে উঠেন থার্টি ফার্স্ট নাইটের নোংরামী এবং অপচয়ের উম্মাদনায়।
নারীর অধিকার আদায়ে ইসলামের একহাত নেওয়া নারীবাদি সুশীলরাও এদিন উপলক্ষে পণ্য হিসেবে বিক্রিত নারী ভোগে মেতে উঠবে। পিছিয়ে থাকবেন না, নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী ইসলামকে গৃহবন্দী করা রাজনীতিকরাও। বাংলা সংস্কৃতির ঠিকাদারেরাই কাল পশ্চিমা এই সংস্কৃতি নিয়ে মেয়েলি ভাবালুতায় ডুযে যাবেন। আর মিডিয়া? তার বহুলাংশ তো আজ নরপিচাশ ও অসভ্যদেরই আয়নায় পরিণত হয়েছে। সেসব মিডিয়াই তো এসবের মূল পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায়। তথাকথিত এসব সুশীলরাই অন্য কোন দিন হয়তো টিভির পর্দা ফাটাবেন ইভটিজিং রোধের বক্তব্যে। হায় জাতি! হায় জাতির বিবেক!
আল্লাহর দীন যেখানে গৃহবন্দি; ইসলাম যে সমাজের অতি সাধারণ ও গুরুত্বহীন বিষয়, সেখানে এসব কোন ব্যপারই না। কারো চোখেই লাজ বা লজ্জা নেই, সবাই স্বাভাবিক। আজ থেকে বহুদিন আগে এই থার্টিফাস্ট নাইটেই গভীর রাতে উম্মাদনা করতে বের হয়ে আসা “বাঁধন” এর শাড়ি ও সংসারের বাঁধন দুই-ই খুলেছিল তথাকথিত মুক্তমনা ও তাদের শিষ্যরা। এজন্য উক্ত কালচারের বিরোদ্ধে কথা তোলেনি কেউ। অথচ ইসলামের নামে বিপথগামী কেউ মন্দ কিছু করলেই তাদের মুখে উঠে ইসলাম নিয়ন্ত্রণের কথা।
চার. কয়েক বছর আগে থার্টি ফার্স্ট নাইটে তথাকথিত সুশীল, মুক্তমনাদের জন্য আমদানী হয়েছিল ২০০০ নর্তকী। তখনকার গণমাধ্যমগুলোয় ফলাও করে সেসব সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। যখন রাজধানীতে থার্টি ফার্স্ট নাইটের উম্মামদায় নেমে পড়েন কিছু লোক, ঠিক তখনই কনকনে শীতে একটুখানি উষ্ণতার পরশ পাওয়ার মতো কাপড়ের অভাবে প্রতি বছরই মৃত্যুমুখে পতিত হন বহু অভাবী লোক। বছর দুয়েক আগে একজন ইসলাম বিদ্বেষী লেখক তার বহুল আলোচিত প্রথম আলোর লেখায় যুবকদেরকে যুবতীদের ভালবাসা ও সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করার নসীহত করেছেন। ধর্মান্ধতা ছেড়ে প্রেমে ভাবালুতা করার নির্দেশ করেছেন। গরীব ও হতদরিদ্র লোকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে কম্পমান হলেও তারা অনেক ফুরফুরে। তাদের এক্সট্রা উষ্ণতার জন্য প্রতি শীতেই থাকে থার্টি ফাস্ট নাইটের গরম আয়োজন। জাতিকে নসীহতকারী প্রগতিশীলরা এতে লাখ টাকার টিকেট কিনে নাইট ক্লাবে গিয়ে নাচেন, সূরা টানেন।
বছর তিনেক আগের দৈনিক মানবজমিন বলছে, থার্টি ফার্স্ট নাইট মাতাতে আসছে ভারত, মালয়েশীয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন ও কেনিয়ার ডিজেরা। রেডিসন, রিজেন্সি ও লেকশোর-এ পারফর্ম করবেন তারা। তাদের নাচ ও গানের সঙ্গে থাকছে এদেশীয় আইটেম গার্ল ও ডিজেদের মোহনীয় হাতছানি। থাকছে ফ্যাশন শো, আইটেম ড্যান্স ও লাইভ মিউজিক কনসার্ট। রাজধানীর ডিজে স্কুল গ্যারেজ ও আইস সূত্র জানিয়েছে, এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইটে দুই সহস্রাধিক ডিজে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নাচের ঢেউ তুলবেন। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশের ডিজে ও ড্যান্সারদের নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া এদেশীয় ডিজেরা ইতিমধ্যেই পারসোনাল ও করপোরেট প্রোগ্রামে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
এই যদি হয় তিন বছর আগের পরিস্থিতি। তবে এখনকার অবস্থা কতোটা ভয়াবহ, তা সহজেই অনুমেয়! আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে তিনি যেন আমাদের রক্ষা করেন এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুন্দর পরিবেশে বসবাসের তাউফীক দান করেন। আমীন।
লেখক: শাইখ আহমদ উল্লাহ
দাঈ ও গবেষক: ইসলামিক কালচারাল অফিস, পশ্চিম দাম্মাম, সউদী আরব
আল্লাহ আপনার সহায় হউন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।