তীব্র শীতে সহবাসের পর শুধু তায়াম্মুম করলে কি চলবে?
প্রশ্ন: তীব্র শীতে সহবাসের পর আমি কি শুধু তায়াম্মুম করে সলাত আদায় করতে পারি? কারণ আমি জানি, তাৎক্ষনিক ভাবে গোসল করে পবিত্র হওয়া আমার জন্য সম্ভব নয়। অধিকন্তু, প্রচণ্ড শীত আমার পিঠের পীড়াকে ভীষণ রকম বাড়িয়ে তোলে। ফলে আমি অসুস্থ হয়ে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
উত্তর: প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ্র জন্য।
যে ব্যক্তি স্ত্রী সহবাসের কারণে অপবিত্র হয়ে যাবে তাকে অবশ্যই গোসল করে পবিত্র হয়ে স্বলাত আদায় করতে হবে। কারণ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
“যদি তোমরা (স্ত্রী সহবাসের কারণে) অপবিত্র হও তবে (গোসলের মাধ্যমে) সারা দেহ পবিত্র করে নাও” [আল মায়েদাহ্; ৫:৬]
কিন্তু পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি ব্যবহারের কারণে রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকলে কিংবা পানি অতিরিক্ত ঠাণ্ডা হলে এবং তা গরম করার ব্যবস্থা না থাকলে- ইত্যাদি কারণে কোনও ব্যক্তি যদি পানি ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে গোসলের পরিবর্তে তিনি মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে পারেন। কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“আর তোমরা যদি রোগগ্রস্ত হও, কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ (সহবাস) করো, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও” [আল মায়েদাহ্; ৫:৬]
উল্লেখিত আয়াত ইংগিত করে যে, পানি ব্যবহার করলে যার ক্ষতি হতে পারে যেমন গোসল করার কারণে মৃত্যু আশংকা থাকে অথবা রোগ বৃদ্ধি পায় কিংবা রোগের আরোগ্য বিলম্বিত হয় সেক্ষেত্রে ব্যক্তি তায়াম্মুম করবে। কিভাবে তায়াম্মুম করতে হবে তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“তা (মাটি) দ্বারা স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাসেহ্ করো (মুছে ফেলো)” [আল মায়েদাহ্; ৫:৬]
তাঁর এরূপ বিধানের পেছনে কারণ কী তা আল্লাহ্ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। যেমনটি তিনি বলেন,
“আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” [আল মায়েদাহ্; ৫:৬]
‘আমর ইবনুল ‘আস (রাদ্বিয়াল্লাহ ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যাতু সালাসিলের যুদ্ধের সময় একদা শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার আশংকা হল যে, যদি এই সময় আমি গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমি তায়াম্মুম করে আমার সাথীদের সাথে ফজরের স্বলাত আদায় করি। ফিরে আসার পর আমার সঙ্গী-সাথীরা এ সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে অবহিত করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “হে ‘আমর! তুমি নাপাক অবস্থায় তোমার সাথীদের সাথে সলাত আদায় করলে?” আমি তাঁকে আমার গোসল করার অসমর্থতার কথা জ্ঞাপন করলাম এবং আরও বললাম, “আমি আল্লাহ্ তা’আলাকে বলতে শুনেছি: ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান’ [আন নিসা; ৪:২৯]” একথা শুনে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু না বলে মুচকি হাসলেন।
আবু দাউদ হাদিসটি সংকলন করেছেন, ৩৪৪; সহীহ্ আবী দাঊদে আল আলবানি হাদিসটিকে সহীহ্ বলে রায় দিয়েছেন।
আল-হাফিয ইবনে হাজার (রহিমাহুল্লাহ্) বলেন,
এই হাদিস ইংগিত করে যে, ঠাণ্ডার কারণেই হোক আর অন্য কোনও কারণেই হোক, পানি ব্যবহার করলে যদি কারো মৃত্যুর আশংকা থাকে তাহলে তার জন্য তায়াম্মুক করার অনুমতি আছে এবং তায়াম্মুমকারী ব্যক্তি যারা ওজু করেছেন তাদের সাথে সলাত আদায় করতে পারবেন।
ফাত’হুল বারী, ১/৪৫৪
শায়েখ ‘আব্দুল ‘আজিজ ইবনে বায (রহিমাহুল্লাহ্) বলেন,
যদি গরম পানির ব্যবস্থা থাকে অথবা পানি গরম করার ব্যবস্থা থাকে কিংবা প্রতিবেশী বা অন্যকারো থেকে পানি কেনার ব্যবস্থা থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই পানি ব্যবহার করতে হবে। কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, “তোমরা আল্লাহ্কে যথাসাধ্য ভয় করো এবং তাঁর প্রতি তোমাদের কর্তব্য পূর্ণ করো” [আত্-তাগাবুন, ৬৪:১৬] আপনার পক্ষে যতখানি সম্ভব- পানি কিনে হোক, গরম করে হোক আর অন্য কোনও ভাবেই হোক- পারতপক্ষে আপনি পানি দিয়ে যথানিয়মে ওজু করার চেষ্টা করবেন। এসব চেষ্টার পরও যদি ব্যর্থ হোন, শীত অতীব তীব্র হয়, জীবনের জন্য ঝুঁকি থাকে, আশপাশের কারো থেকে পানি কেনার বা তা গরম করার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে আপনার জন্য ছাড় আছে। এবং এক্ষেত্রে আপনার জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্ট হবে। কারণ আল্লাহ্ ত’আলা বলেন,
“তোমরা আল্লাহ্কে যথাসাধ্য ভয় করো এবং তাঁর প্রতি তোমাদের কর্তব্য পূর্ণ করো” [আত্-তাগাবুন, ৬৪:১৬]
এবং
“অতঃপর পানি না পাও, তবে তা (মাটি) দ্বারা স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাসেহ্ করো (মুছে ফেলো)” [আল মায়েদাহ্; ৫:৬]
যার নিকট পানির ব্যবস্থা আছে কিন্তু তা ব্যবহার করলে সমস্যা এবং যার কাছে কোনও পানিই নেই- এদের উভয়ের জন্য একই বিধান।
মাজমূ’ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১০/১৯৯,২০০
ক্ষতি না হলে শরীরের যতগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্ভব ধুয়ে ফেলতে হবে যেমন দুহাত, দুই পা ইত্যাদি। তারপর তায়াম্মুম করতে হবে।
আমরা আল্লাহ্ নিকট দোয়া করি তিনি আপনাকে দ্রুত আরোগ্য দান করুন এবং আপনার এই অসুস্থতাকে আপনার পাপ মোচনের জন্য কাফফারা বানিয়ে দিন এবং আপনার মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে দিন।
আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীন সমস্ত বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
সোর্স: IslamQA.Com (বাংলা-ফেসবুক পেজ)
এই ব্যাপারে আমার একটি প্রশ্ন সেতি হল পানি কটুটুকও দুরত্তের মধ্যে না পেলে এই বিধান প্রযোজ্য? আমরা যারা শহরে বাস করি দেখা যায় রাতে অপবিত্র হই কিন্তু ফজরের সময় ট্যাঙ্কি তে পানি থাকে না। এই সময়ে কি তাইম্মুম করলে হবে?
i think better avoid sex when more cold.
আমার মনে হয় শীতের রাতে সহবাস না করে ফজরের পর করাই ভাল।
আসসালামু আলাইকুম। আপনাকে তায়াম্মুন ও সহবাস সর্ম্পকে লিখার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।