জিল হজ্জের প্রথম দশকের করণীয়
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ আল কাফী
জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফযীলতঃ
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:
(ما العملُ في أيامِ العشْرِ أفضلَ من العملِ في هذه . قالوا : ولا الجهادُ ؟ قال : ولا الجهادُ، إلا رجلٌ خرجَ يخاطِرُ بنفسِه ومالِه، فلم يرجِعْ بشيءٍ -(أخرجه البخاري , باب فضل العمل في أيام التشريق
‘জিল হজ্জ্বের প্রথম দশকের চাইতে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহ্র নিকট অধিক পছন্দনীয়।’ সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন: আল্লহ্র পথে জিহাদও নয় হে রাসূলুল্লাহ্? তিনি বললেন: ‘আল্লাহ্র পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে স্বীয় জান-মাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে, আর উহার কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করে না।’ (বুখারী, অনুচ্ছেদ: আইয়ামে তাশরীকের দিন গুলোতে আমল করার ফযীলত)
অন্য বর্ণনায় ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে এসেছে- ‘তোমরা এই দিনগুলোতে অধিক হারে তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পাঠ কর।’ (আহমদ)
পছন্দনীয় আমলসমূহঃ
- হজ্জ্ব ও উমরাহ্ পালন করাঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: “এক উমরাহ্ থেকে অপর উমরাহ্র মাঝে সংঘটিত পাপ-সমূহ এমনিই বিমোচিত হয়। আর মাকবুল হজ্জ্বের বিনিময় নিশ্চিতভাবে জান্নাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
- যাবতীয় সৎ কাজ অধিক হারে আদায় করাঃ যেমন- নামাজ, রোজা, সাদকাহ্ (দান), কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, নিকটাত্মীয়ের সাথে সদাচার, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ, তওবা, ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ইত্যাদি। কেননা সৎ আমলের প্রতিদান এইদিন গুলিতে যেমন অধিক হারে বৃদ্ধি পায়, তেমনি সৎ আমলই অল্লাহ্র মাগফিরাত ও রহ্মতকে নির্দিষ্ট করে।
- রোজা রাখাঃ ইমাম নবুবী (রঃ) বলেন: ‘এই দিনগুলিতে রোজা পালন করা মুস্তাহাব। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজ্জ্বে যায়নি তার জন্য আরাফাত দিবস তথা ৯ই জিলহজ্জ্বে রোজা রাখা মুস্তাহাব।’ হযরত আবু ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: ‘আরাফাত দিবসের রোজা আগত এবং বিগত এক বছরের পাপ বিমোচন করে।’ (সহীহ্ মুসলিম)
- কুরবানী করাঃ ঈদের দিন বা আইয়ামে তাশরীকে (জিল হজ্জ্বের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ) ক্বুরবানী করা। ক্বুরবানী আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আঃ)-এর সুন্নত, যখন আল্লাহ্ তাঁকে ঈসমাইল (আঃ) এর বিনিময়ে একটি বিরাট কুরবানী দান করেছিলেন। আল্লাহ্ বলেন: فصللربكوانحر ‘আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও ক্বুরবানী করুন।’(কাউছার-৩)
- নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকা: রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: ‘তোমাদের কেহ যদি জিলহজ্জ্বের চাঁদ দেখে এবং ক্বুরবানী করার ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন ক্বুরবানী পর্যন্ত স্বীয় চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম)
- তাকবীর বলাঃ নির্দিষ্ট এবং অনির্দিষ্ট তাকবীর উঁচু আওয়াজে বলা। মহিলাগন নীচু আওয়াজে বলবে। তাকবীর এককভাবে বলা সুন্নত, দলবদ্ধ হয়ে সমস্বরে বলা অবৈধ। কেননা এরূপ তাকবীর বলা বাসূলুল্লাহ্ (সাঃ), তাঁর সাহাবা এবং পূণ্যাত্মা পূর্বসূরীদের থেকে প্রমানিত নয়।
ক) অনির্দিষ্ট তাকবীরঃ অর্থাৎ সময় বা স্থান নির্দিষ্ট না করা। যেমন- বাড়ী, মসজিদ, বাজার ইত্যাদি স্থানে। জিলহজ্জ্বের প্রথম দিন থেকে নিয়ে ঈদের দিন পর্যন্ত যে কোন সময় এই তাকবীর চলতে থাকবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন: হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) এবং হযরত আবুহুরায়রা (রাঃ) এই দিনগুলোতে তাকবীর বলতে বলতে বাজারে যেতেন এবং তাদের দেখে লোকেরাও তাকবীর বলত।
খ) নির্দিষ্ট তাকবীরঃ অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবীর বলা। এরূপ তাকবীর আরাফাত দিবসের ৯ই জিলহজ্জ্ব ফজর নামাজ থেকে শুরু হয়ে চলতে থাকবে ‘আইয়্যামেতাশরিক’ তথা ১৩ই জিলহজ্জ্ব দিবসের শেষ পর্যন্ত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন: তাকবীরের ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত হলো যাতে পূর্বসূরী অধিকাংশ সাহাবা, ফিকাহ্বিদ এবং ইমাম ঐক্যমত তা হলো- ‘তাকবীর আরাফাত দিবসের ফজর থেকে শুরু হয়ে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিবস পর্যন্ত প্রত্যেক নামাযের পর বলতে হবে।’
তাকবীরঃ اللهأكبر،اللهأكبر،لاإلهإلاالله،واللهأكبراللهأكبروللهالحمد
উচ্চারণঃআল্লাহু আক্বার, আল্লাহু আক্বার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আক্বার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।
ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা। খুতবায় উপস্থিত থেকে তা থেকে উপকৃত হওয়া।
উল্লেখ্য যে, ঈদ হলো কল্যাণময় আমল ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। সুতরাং উহাকে অন্যায় অশ্লীলতা ও পাপাচার যেমন- গান-বাদ্য, নগ্ন ফিল্ম, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি দ্বারা কুলষিত করবে না, যা পূর্বকৃত সৎ আমলসমূহ বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
الأعمال المستحبة في العشر الأول من ذي الحجة
المؤلف: الشيخ عبد الله بن عبد الرحمن الجبرين
ترجمة: محمد عبد الله الكافي
আরও পড়ুন: সহজ হজ্জ ও ওমরাহ্ নির্দেশিকা, যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের করণীয় ও ঈদুল আযহার বিধি-বিধান
জিল হজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কুরবানী করবে তার জন্য চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা জরুরী